নাট্যকার ও নির্দেশকের কথাঃ

আমার জন্ম-ভুখণ্ড বাঙলা। জাতি, বৈচিত্রে, সংস্কৃতিতে বাঙলা ছিলো ঈর্ষনীয়, আভিজাত্যের প্রতিক। আজ সে হতদরিদ্র, শিক্ষাহীন, ব্যাক্তিত্বহীন, বিষাক্ত সাম্প্রদায়িকতার বিষে। আমি বিশ্বাস করি ধর্ম ব্যাক্তিকে নৈরাশ্য থেকে, হতাশা থেকে, মানসিক মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু সৃষ্টিশীল, চিন্তাশীল, শিক্ষিত মানুষ গড়তে সে যোগ্য কি ? যদি সেখানে যোগ্যতার আলো থেকেও থাকে তবে আজ তা অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত, সেখানে গ্রহণেরকাল ধাবমান। সেই ধর্মীয় অন্ধত্বের চর্চা ক্ষুদ্র থেকে বড় হতে হতে কালের পথ পরিক্রমায় ভয়ংকর দানব রূপে ভর করেছে বাঙালির উপর। চৈত্র সংক্রান্তি, বৈশাখী মেলা, নৌকাবাইচ কিংবা যাত্রাগানের সংস্কৃতিই ছিলো আমাদের দৃষ্টিশক্তি। কিন্তু আজ বাঙালির চোখে ষরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে ভীনদেশী অপসংস্কৃতিই প্রতিস্থাপন হচ্ছে প্রতিমুহুর্তে। কৈশোরে লালনগীতি শুনতাম এক বন্ধুর কাছে, সেও ছিলো এক কিশোর। আখড়াই ঢংয়ে বাদ্যযন্ত্রহীন কন্ঠে অসাধারণ গাইতো সে। লালন দর্শন-তত্ত¡ নিয়ে আড্ডাবাজি হতো। বন্ধুটি শিক্ষক হয়ে উঠেছিলো আমাদের। তারপর বন্ধুটির হঠাৎ পরিবর্তন। সঙ্গীতকে সে পাপ হিসাবে দেখতে শুরু করে। ধর্ম পরিপন্থি বলে মনে করে। এই নাটকে সয়ফুল, কৈশোরের বন্ধুটিকে আশ্রয় করেই নির্মীত প্রতিচ্ছবি। মানুষের সুশিক্ষায় স্থির থাকতে না পারা, অশিক্ষাকে শিক্ষা বলে গ্রহণ করা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে চিনতে না পারার দৃষ্টিহীনতাই এই নাটকে ঘুরে ফিরে এসেছে। উর্ণাজাল নাটকটি আমার লেখা প্রথম মঞ্চ নাটক। সে কারণে নাটকের কাহিনী, সংলাপ ও চরিত্র নির্মাণে হয়ত অপরিপক্কতা থাকতে পারে, তবে নাটকের বক্তব্য আমার সচেতন-শিক্ষার নির্যাস। ‘বাতিঘর’ নাট্যদলের এটি প্রথম মঞ্চ নাটক। নবীন নাট্যকর্মীরা আমার অকথ্য-উচ্চকিত-উত্তেজিত ব্যবহারে অতিষ্ট হয়েও হাল ছাড়ে নি। তাদের ক্লান্তিহীন শ্রম এবং নাট্যচর্চার স্বপ্নদৃষ্টি আমাকে ভাবাবে বহুদিন। বিশেষ করে ‘মুক্তনীল’ ছোট্ট মানুষটির মধ্যে এত বড় নাটক পাগল-প্রাণ দেখব কি আর এ জনমে! আহা! জয় হোক ‘বাতিঘর’-এর।

কাহিনী সংক্ষেপ -

বিদেশ থেকে শিক্ষা জিবন শেষ করে নিজ গ্রামে ফেরে খালেদ। দির্ঘ প্রতিক্ষার প্রহর শেষ হয় গ্রামবাসীর। স্কুলের জন্য রেখে যাওয়া পিতার স্বপ্নের একখন্ড জমিতে মাদ্রাসা গড়ে তোলে সে। অন্যদিকে সাইজির আখড়ায় বেড়ে উঠা গায়েন সয়ফুল, খালেদের বাল্যবন্ধু। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শিল্পের মনসংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শিল্পী। ঘূনে কাটে একতারাটি। চক্ষুদান করে যাওয়া জয়নাল গাতকের জানাজা পড়ানোর দায়ে ইমামের জিহবা কেটে নেয় কে বা কারা। গাতকের কবরে গোক্ষুর দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয় গ্রামবাসী। সুযোগে ধর্মীয় মতবাদের আশ্রয়ে ঢুকে পড়ে অপকৌশল-কূটনীতি। কাফের মুর্তাদ হত্যার প্রশিক্ষণ চলতে থাকে দুরের জঙ্গলে, জঙ্গি ক্যাম্পে। বেধর্মী তিনজন ডাক্তার হত্যা করতে পুরো হাসপাতাল ধ্বংসের বর্ননা, বিভৎসতার চরম রুপ মৃত অন্তস্বত্ত¡া মায়ের পেট ফেটে বেড়িয়ে আসা মৃত নবজাতক। সমাবেশে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে, হতাহতের দৃশ্যে হতবিহবল মুজাহীদের মৃত্য হয়, পিন পয়েন্ট খোলা নিজের হাতের অন্য গ্রেনেডে । গোপনে বাঁশঝাড়ে দাফন হয় লাশটির। মধ্যরাতে শহীদের লাশ খায় একদল শিয়াল। মুর্তাদের চোখ নিয়ে বেচে থাকা মুজাহীদ বিভ্রান্ত হয় জিহাদী কর্মে। কৌশলে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে আমীর। তৃতীয় নয়ন উম্মোচিত হয় মুজাহীদের।

মঞ্চে

# খালেদ - মুক্তনীল
# সয়ফুল - সাদ্দাম রহমান
# সেতারা - সুইটি সরকার
# সাঁইজি / যাত্রাবাবু / হোসেন আলী - সঞ্জয় গোস্বামী
# ডা. আশ্রাফ - খালিদ হাসান রুমি
# পিতা / হাফেজ হান্নান - মনিরুজ্জামান ফিরোজ
# আজাহার/ নৃপেন - শিশির সরকার
# মেজর / হাতেম/ গ্রামবাসী - সঞ্জয় হালদার
# তৈয়ব মুন্সী - স্বরণ বিশ্বাস
# আসমা জামান - সাবরিনা সারমিন
# জিবুন্নেসা - তারানা তাবাসসুন চেরী
# ইমাম / গ্রামবাসী - ফয়সাল আহম্মেদ
# ছাত্র / গ্রামবাসী - রাজু আহমেদ
# গ্রামবাসী - রাজা আকন
# গ্রামবাসী - মৃধা অয়োমী
# বৃদ্ধ - ইয়াসির আরাফাত
# পাগল - শৈবাল সান্যাল


রচনা ও নির্দেশনা - বাকার বকুল
সার্বিক তত্বাবধানে - মুক্তনীল
প্রযোজনা অধিকর্তা - শাহানা জয়
আলোক প্রক্ষেপণ - তানজিল আহম্মেদ

সেট ডিজাইন, প্রপস, মঞ্চ, পোশাক -

রুনা কাঞ্চন
সৈয়দ মাসুম রেজা
সাদিয়া ইউসুফ বৃতা

আবহ সংগীত -

সঞ্জয় গোস্বামী
রবিউল ইসলাম শশী

আবহ সংগীত প্রয়োগ -

রুম্মান শারু
জনি সেন রুবেল
সাদ্দাম রহমান
মুহাইমিন অঞ্জন
শিশির সরকার
জর্জ দীপ্ত
মৃধা অয়োমী

কোরিওগ্রাফী -

শিশির সরকার
ফরহাদ আহম্মেদ শামীম

পোস্টার -

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
সৈয়দ মাসুম রেজা

কৃতজ্ঞতায় -

আজাদ আবুল কালাম
রিফাত নোবেল
স্নাতা শাহরিন