জনপ্রিয় উপন্যাসিক রিজিয়া রহমানের উপন্যাসকে উপজীব্য করে অলিখিত উপাখ্যান উপন্যাসকে গবেষণার ভিত্তিতে নাট্যরূপ দিয়েছেন নির্দেশক মুক্তনীল। নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর প্রথম এই নাটকে কথকের ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছেন। কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছিল ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীর বীরত্বাগাথার কথা। সেখানে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে রিজিয়া রহমান লিখেছিলেন অলিখিত উপাখ্যান নামের উপন্যাস। আর উপন্যাসটিকে আশ্রয় করে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। এটি নাট্যদল বাতিঘরের দ্বিতীয় প্রযোজনা। অলিখিত উপাখ্যানে উঠে এসেছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অজানা এক দৃশ্যপট।গত নবেম্বর থেকে চলছিল নাটকটির মহড়া। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডায়রি থেকে ইতিহাস চাপা পড়া যে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীর নাম পাওয়া যায়, তিনি রহিমউল্লাহ। নীল বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের সরালীয়ায় ইংরেজ জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এই রহিমউল্লাহকে উপন্যাসিক রিজিয়া রহমান হারানো ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন তার ‘অলিখিত উপাখ্যান’ উপন্যাসে। এই উপাখ্যান সেই সময়ের ইংরেজ বেনিয়াদের শোষণের আখ্যান। কালো মানুষগুলোর মার খেতে খেতেও গর্জে ওঠার আখ্যান। চারদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মোরেল কুঠিতে কিছু সাদা চামড়ার মানুষের অমানবিক অত্যাচার দেখে আহত হয় তাদেরই একজন, মোরেল পরিবারের ছোট মেয়ে অ্যানা। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করেই প্রজাদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে ছোট জমিদার হেনরি মোরেল ও তার সহযোগী ম্যানেজার জেমস হেইলি। চাষিদের দিয়ে জোর করে অথবা মিথ্যা মামলা দিয়ে কয়েদি বানিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে সুন্দরবন কেটে আবাদ করানোর প্রতিবাদে ও গ্রামের লোকের একমাত্র বিনোদনের উৎস কালাচাঁদ ফকিরের মেলা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে কৃষক বিপ্লবী রহিমউল্লাহ ও তার দল। রহিমউল্লাহর দলের সাহসী জোহরার দিকে নজর পড়ে জমিদার হেনরী মোরেলের। রূপসী জোহরাকে কাছে পাওয়ার জন্য মরিয়া হেনরী উত্তেজনার আতিশয্যে অস্থির হয়ে কালো চামড়ার মানুষগুলোকে কয়েদী বানিয়ে ছোটে সুন্দর বন কেটে আবাদ ও বসতি গড়তে। বনের হিংস্র জন্তু, সাপ-পোকামাকরের কামরে একের পর এক কয়েদী মারা পড়তে থাকে। এডভেঞ্চার প্রিয় হেরী মেতে উঠে আহত কয়েদীকে টোপ বানিয়ে ম্যানইটার বাঘ শিকারের পাষ- ক্রিয়ায়। অন্যদিকে ম্যানেজার হেইলী গ্রামের স্থানীয় কিছু মীরজাফরকে সঙ্গে নিয়ে রহিমউল্লাহকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বন্দী হয়ে রহিমউল্লাহর কথিত বোন জোহরাকে। হেনরী ও বেইলীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে পারে না জোহরা। কিন্তু নিজে মরে তার গোত্রের মানুষগুলোকে আন্দোলনের খোরাক দিয়ে যায় জোহরা। নাটকের শুরু এখান থেকেই... প্রযোজনাটিতে বঙ্কিম চরিত্রে রূপ দিয়েছেন পান্থ আফজাল এবং রহিমউল্লাহ চরিত্রে স্মরণ বিশ্বাস।এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারানা তাবাচ্ছুম চেরি, মনিরুজ্জামান ফিরোজ, সাফিন আহম্মেদ অশ্রু, সাদ্দাম রহমান,সাবরিনা শারমিন,ফয়সাল, সাদিয়া ইউসুফ বৃতা,তাজিম আহমেদ শাওন,সঞ্জয় গোস্বামী, রুম্মান শারু, সঞ্জয় হালদার, শিশির সরকার,পরশ,শাম্মি মৌ,তানি,তন্ময় প্রমুখ।মঞ্চ পরিকল্পনা, পোষ্টার ও প্রচ্ছদ করেছেন এম আসলাম লিটন,আলোক পরিকল্পনায় পলাশ হেনড্রী সেন,কস্টিউম ও প্রপস তাজিম আহমেদ শাওন ও শাম্মি মৌ,কোরিওগ্রাফি শিশির সরকার,সংগীত সাদ্দাম রহমান ও সংগীত প্রক্ষেপণে অপূর্ব দে।